হাতের ও আঙ্গুলের ব্যথা , ঝিনঝিন , অবশ ভাব কিসের লক্ষন ?

Must Read

অনেকেই হাতের ও আঙ্গুলে ব্যথা , ঝিনঝিন , অবশ ভাব অনুভব করেন কিন্তু বুঝতে পারেন না এ সমস্যা কিসের কারনে হচ্ছে । প্রথম দিকে সামান্য আকারে শুরু হলেও অনেক সময় এ সমস্যা হাত ও আঙ্গুলের প্যারালাইসিস বা অবশ হয়ে যাওয়ায় রূপ নিতে পারে । এই ধরনের হাতের ব্যাথা কিংবা অবশ ভাব কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal tunnel syndrome) এর কারনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হতে পারে ।

কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal tunnel syndrome) হাতের তালুর কাছে কব্জির ভাঁজের ভেতর দিয়ে মিডিয়ান নার্ভ ( Median Nurve) এর উপর উচ্চ চাপের প্রভাবে তৈরী হয় । বিভিন্ন কারনে উক্ত এলাকার টিস্যু স্ফীতির কারনে এই উচ্চ চাপ তৈরী হয়ে থাকে ।

সাধারণত হাতের কব্জি , বৃদ্ধাংগুল , তর্জনী , মধ্য আংগুল , অনামিকার অর্ধেক অংশে ব্যাথা ও ঝিনঝিন ভাব ও অবশ ভাব হয় । কিছু ক্ষেত্রে ব্যাথা কব্জির উপরের দিকে হতে পারে । তবে কড়ে আংগুলে এই ধরনের ব্যাথা বা অবশ ভাব হয় না ।

 ধীরে ধীরে যখন মিডিয়ান নার্ভ ( Median Nurve) এর চাপ বাড়তে থাকে তখন হাতের সুক্ষ কাজে ব্যঘাত ঘটতে শুরু করে বিশেষ করে যে সমস্ত কাজে বৃদ্ধাংগুল ব্যবহার করতে হয় যেমন হাতদিয়ে সুঁই ধরা বা সেলাই করা , কোন কিছু গিট দেয়া ইত্যাদি কাজ করতে সমস্যা দেখা দেয় । বৃদ্ধাংগুলের গোড়ায় হাতের তালুর ফোলা অংশ (Thenar eminence)শুকিয়ে দূর্বল হয়ে যায় এবং ঐ জায়গার ছোট মাংসপেসী প্যরালাইসড বা অকেজো হয়ে পড়ে ।

আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য যে এই ব্যাথা রাতে ঘুমের মধ্যে বেড়ে যায় এবং ব্যাথার কারনে অনেকেই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন । কেন রাতে ব্যথা বেড়ে যায় তার কারন সম্পূর্ন রূপে জানা সম্ভব হয় নি ।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আক্রান্ত হাত জোরে ঝাঁকালে ব্যাথার উপশম হয় , একে ফ্লিক সাইন (Flick sign ) বলা হয় । হাত নিচের দিকে নামিয়ে রাখলেও ব্যাথা কমে আসে । রোগীদের মনে হয় তাদের হাত ফোলে আছে কিন্তু আসলে হাত ফোলে ওঠে না । নার্ভ এর উচ্চ চাপের কারনে এমন অনুভব হয়ে থাকে ।

যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal tunnel syndrome) বেশী হতে দেখা যায় । তাছাড়া হাইপোথাইরয়েড , রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস , ওস্টিওআর্থ্রাইটিস , এমায়লয়ডোসিস , অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা এবং গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা বেশী দেখা যায় ।

কব্জি ভাঁজ পরীক্ষা বা ফ্যালেন্স সাইন ( Phalen’s sign) এর মাধ্যমে কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal tunnel syndrome) এর প্রথমিক পরীক্ষা করে নেয়া যায় । এক্ষেত্রে রোগীকে দুই হাতের কব্জি ভাঁজকরা অবস্থায় একত্রিত করে এক মিনিট রাখতে বলা হয় । ৫০% ক্ষেত্রে রোগী আক্রান্ত হতের ব্যাথা ও আংগুলে অবশভাব অনুভব করে থাকেন , এর থেকে প্রথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এর কারন কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal tunnel syndrome) । তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্য আরো অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন MRI , High resolution Ultrasound , Nerve conduction study , Electrophysiological study ইত্যাদি ।

আশ্চর্য্য জনক হলেও সত্য যে এই ব্যাথা রাতে ঘুমের মধ্যে বেড়ে যায় এবং ব্যাথার কারনে অনেকেই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন । কেন রাতে ব্যথা বেড়ে যায় তার কারন সম্পূর্ন রূপে জানা সম্ভব হয় নি ।

সামান্য উপসর্গে ফিজিওথেরাপি নির্দিষ্ট ব্যায়ামের (Nerve and tendon gliding exercise ) মাধ্যমে অনেক সময় উপশম পাওয়া যায় কিন্তু সময়ের সাথ যদি উপসর্গ বাড়তে থাকে তাহলে প্রথমদিকে স্টেরয়েড জাতীয় ইঞ্জেকশন দেয় হয় । স্বল্প মাত্রার সমস্যায় স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দ্বারা ভাল ফল পাওয়া সম্ভব ।

হাতের কব্জির ঘন ঘন ব্যবহার কমানো অত্যান্ত জরুরী । যারা কম্পনশীন যন্ত্র ব্যবহার করেন তারা এ ধরনের কাজ করলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কীবোর্ডে টাইপ করার সময় হাতের কব্জিতে যাতে চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখত হবে ।

কব্জিতে স্প্লিন্ট ( Wrist splint ) ব্যবহার করলে হাতে কব্জির ঘন ব্যবহার সীমিত হয়ে আসে এবং কব্জি ভাঁজ কম হয় যার ফলে উপসর্গ কমে আসে । কব্জিতে স্প্লিন্ট ( Wrist splint ) চার সপ্তাহ ব্যাবহার করা যেতে পারে ।

কিছু ক্ষেত্রে উপরের চিকিৎসার পাশাপাশি স্বল্প মাত্রার ম্যাথা নাশক সেবন করা যেতে পারে ।

যাদের তীব্র সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে সার্জারী করা প্রয়োজন হয় । Supraretinacular endoscopic carpal tunnel release এবং Carpal tunnel release and Median Nerve decompression জাতীয় সার্জারী করে মিডিয়ান নার্ভের চাপ অপসারন করা হয় ।

Dr. Sharif

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

Latest News

বাসায় অক্সিজেন – কোভিড ১৯ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর জন্য কখন উপযোগী ?

কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাবার সাথে সাথে হাসপাতালে বেড স্বল্পতার কারনে অনেক রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img