আমাদের সমাজে ঔষধ সম্পর্কিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে । হারবাল চিকিৎসায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই মনে করা হয় । আর এলোপ্যাথী ( মেডিসিনবিদরা এটির দ্বারা প্রচলিত চিকিৎসা বুঝিয়ে থাকেন ) চিকিৎসায় আছে মহা বিপদ , পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ।আমি সবার বুঝার স্বার্থে এই এলোপ্যাথী শব্দটা এখানে ব্যবহার করব যা দ্বারা আসলে প্রচলিত বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসাকে বুঝাব ।
এক কাপ চা প্রতিদিন খান , মেদ কমে কাঠি হয়ে যাবেন । তাও আবার মাত্র পনের দিনে । আমরা ভাবলাম এককাপ করে চা খেলে যদি মেদ কমিয়ে ফেলতে পারি তাহলে আর কি চাই । আর হারবাল চিকিৎসায়তো কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই । আমরা চিন্তা করিনা প্রতিদিন কতটুকু মেদ বা ওজন কমানো বিজ্ঞান সম্মত । সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজির বেশী ওজন কমাতে গেলে আপনি মারাত্বক সাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন । যে হারবাল চা খাবেন তাতে আসলে কি উপাদান আছে বা তার পরিমান কি তা জানা সহজ নয় । আর এটি সেবনের পর আসলে কি হচ্ছে এটার উপর কোন গবেষনা আছে কিনা সেটিও জানা সম্ভব নয় । মেদ কমানোর চা থেকে শুরু করে শরীর ও মন ভাল করার চা, মানসিক রোগ দূরীকরনের চা সবই এখন পাওয়া যাচ্ছে যা সেবন কোন ভাবেই ঝুঁকি মুক্ত নয় ।
আমার কাছে একজন রোগী আসত যার লিভারের এনজাইম পরীক্ষা করে সবসময় বেশী পেতাম । এই এনজাইম বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয় । বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর যখন কারন খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন উনার কাছ থেকে জানতে পারলাম তিনি ওজন কমাবার চা খাচ্ছেন । আমি তাকে চা বন্ধ করে আবার লিভারের এঞ্জাইম পরীক্ষা করে দেখলাম তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে । এতে বুঝা যাচ্ছে ঐ চা উনার লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল করে দিচ্ছিল ধীরে ধীরে।
এলোপ্যাথীতে প্রতিটা ঔষধের উপর দীর্ঘ দিনের গবেষনা থাকে । দীর্ঘ মেয়াদে একটা ঔষধ কি ক্ষতি করতে পারে তাও জানা সম্ভব হয় । ঔষধের নিরাপদ মাত্রাও নির্ধারন করা হয় গবেষনার মাধ্যমে । যদি প্রমানিত হয় কোন ঔষধ ক্ষতিকর তাহলে তা আর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় না । হারবাল চিকিৎসায় এরকম গবেষনা হয় না ।
এলোপ্যাথীতে অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয় যা আসলে হারবাল বা plant source . তবে এগুলোর কার্যকারীতা প্রমানীত এবং দীর্ঘ গবেষনার মাধ্যমে এগুলোর নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি তাও জানা সম্ভব হয়েছে । যেমন উইলো গাছের ছাল থেকে তৈরী করা হয় এসপিরিন যা ব্যাথা নাশক , জ্বর কমাতে সক্ষম কিন্তু বর্তমানে হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিকার এবং প্রতিরোধে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । পপি ফুলের বিচি থেকে তৈরী করা হয় মরফিন , যা উচ্চমাত্রাব ব্যাথা নাশক । ফক্স গ্লোভ গাছ থেকে তৈরী ডিজোক্সিন হৃদরোগে ব্যবহার করা হয় । সিনকোন গাছ থেকে তৈরী কুইনাইন , মেলেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় । রোজী পেরিউইঙ্কেল থেকে তৈরী ভিনক্রিষ্টিন যা লিউকেমিয়া , লিম্ফমা রোগের ব্যবহার করা হয় । প্যাসিফিক ইয়াও প্লান্ট থেকে তৈরী টাক্সল যা ওভারী ক্যান্সারে ব্যবহার করা হয় । স্নেক রুট নামক প্লান্ট থেকে তৈরী রিসারপিন যা উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় । বেলাডোনা গাছ থেক এট্রোপিন , যা হৃদরোগের চিকিৎসা সহ এনেস্থেটিক ড্রাগের সাথে এবং OPC poisoning এ ব্যপক ব্যবহার করা হয় ।
কাজেই হারবাল বা বনাজী অনেক ঔষধও আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র তখনই যখন তা আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি না করে রোগের উপশম করবে । আবার অনেক হারবাল ঔষধ মারাত্বক ক্ষতিকর বিধায় বর্জন করা হয়েছে । ঔষধ খাবার সময় তাই খুব সাবধানের সাথে সেবন করতে হবে ।