কোভিড-১৯ এর টীকার কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে

Must Read

ভ্যাকসিন বা টীকা সংক্রামক রোগে প্রতিকারের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় । কোন টীকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত ছোটখাট এবং নিজ থেকেই নিরাময় হয়ে যায় । গুরুতর অসুস্থতা খুবই কম দেখা যায় ।

বর্তমান সময়ে কোভিড- ১৯ এর মহামারীর বহুল প্রত্যাশিত টীকা আবিস্কারের পর থেকে এই টীকা গ্রহন করার ব্যাপারে প্রথম দিকে জনমনে প্রচূর ভুল ধারনা এবং ভয় বিরাজ করছিল। যদিও সময়ের সাথে সাথে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে এবং এই টীকাভীতি কাটতে শুরু করেছে ।

 টীকা নিয়ে ভীত না হয়ে সচেতন হওয়াটাই জরুরী। আসুন জেনে নেয়া যাক কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে ।

Minor Local Reaction : টীকা নেবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, লালভাব, চুলকানি , নিকটতম জয়েন্টে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে । লালভাব, ফোলাভাব বা ব্যথা সাধারনত ১০ দিন স্থায়ী হত পারে ।

এক্ষেত্রে ইনজেকশন প্রদান কৃত স্থানে ঠান্ডা প্রয়োগ করা , ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করার মাধমে উপশম পাওয়া যেতে পারে , তবে ইনজেকশন প্রদানকৃত স্থানে চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।

Severe Local Reaction: এক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন প্রদানকৃত স্থানে ব্যাথা এবং ফোলা বেশী হবে । নিকটবর্তী জয়েন্টে ব্যাথা অনেক বেশী হবে এবং জয়েন্ট নাড়াতে গেলে ব্যাথা বেড়ে যাবে । এ সমস্যাও সাধারনত টীকা নেবার ৪৮ ঘন্টার আগেই দেখা দেয় ।

এক্ষেত্রেও ইনজেকশনের স্থানে ঠান্ডা প্রয়োগ , ব্যাথা নাশক ঔষধ এবং ফোলা বেশী হলে আক্রান্ত অংশ সামান্য উপরে রাখার মাধ্যমে উপশম পাওয়া যেতে পারে । সাধারনত ৭ – ১০ দিনের ভেতর এই ধরনের সমস্যা সমাধান হয়ে যায় ।

Abscess : টীকা গ্রহনকৃত স্থানে ইনফেকশনের ফলে পুঁজ জমে চামড়ার নীচে ফোলে যেতে পারে কিংবা এক সময় পুঁজ গলে চামড়ার বাইরে পুঁজ ও রক্ত মিশ্রিত তরল বেরিয়ে আসতে পারে ।

এক্ষেত্রে চমড়া কেটে incision and drainage করে পুঁজ বের করে দিতে হবে । ব্যাথানাশক ও এন্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে ।

Nodule : এটি চামড়ার নীচে ছোট গোটার মত । চামড়ার বাইরে থেকে ধরেলে মসৃন উপরিভাগ হাত দিয়ে অনুভব করা যায় । সাধারনত Aluminium – adsorbed টীকার ক্ষেত্রে অনেক সময় এই সমস্যা হয় ।

এরকম হলে পরবর্তী টীকা বা ইঞ্জেকশন একই স্থানে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । মাংস পেশীর ইঞ্জেকশন সঠিক দৈর্ঘের সুই দিয়ে দেয়া উচিৎ । এটি নিরাময় হতে এক বছর বা তার বেশী সময় লাগতে পারে , তাই উদ্বিগ্ন হয়ে বার বার ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন নেই ।

Cellulitis : এটিও এক ধরনের ইনফেকশন । এক্ষেরে টীকা প্রদানকৃত স্থানের চামড়া , তার নীচের ফ্যাট , টিস্যু , মাংসপেশীতে ইনফেকশন হয় । আক্রান্ত জায়গার চামড়া লালা হয়ে ফোলে যায় ও ঐ স্থানের তাপমাত্রা বেড়ে যায় । এক্ষেত্রে সঠিক এন্টিবায়োটিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে । যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে ।

Anaphylaxis : এটি এক ধরনের গুরুতর এলার্জিক রিয়েকশন । সাধারনত টীকা নেবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয় । অতী দ্রুত রক্ত চাপ কমে যাওয়া , অজ্ঞান হওয়া , শ্বাস কষ্ট হওয়া সহ ত্বকের লাল ভাব ব্যাপক আকারে হতে পারে । এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হতে পারে । ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন , শিরাপথে স্যালাইন , স্টেরয়েড কিংবা এন্টিহিস্টামিন ইঞ্জেকশন দেবার প্রয়োজন হতে পারে । তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় না । কোভিড ১৯ টীকা নেবার পর অন্তত ২০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করা উচিৎ । যদি কোন উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তাৎক্ষণিক টীকা কেন্দ্রের চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিৎ।

Fever : জ্বর যে কোন টীকার একটী সাধারন উপসর্গ । সাধারন কম মাত্রার জ্বর কোভিড ১৯ টীকার ক্ষেত্রেও হতে পারে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তীব্র জ্বর ও দেখা যায় । এটা নির্ভর করছে টীকার উপাদান উক্ত ব্যাক্তির শরীরে কি পরিমান ইম্যুনোজেনিক রিয়েকশন করছে তার উপর । টীকা নেবার ৭২ ঘন্টার ভেতর সাধারনত এই উপসর্গ দেখা দেয় ।

এক্ষেত্রে জ্বর কমার জন্য antipyretics জাতীয় ঐষধ , Tepid sponge করা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে সমস্ত শরীর মুছে দেয়া প্রয়োজন । প্রচূর পানি পান করতে হবে কারন শরীরের তাপমাত্রা বেশী থাকলে পানি শুন্যতা দেখা দেয় ।

Rash : সমস্ত শরীরের চামড়ায় লালছে দাগ পড়লে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া প্রয়োজন । এই উপসর্গের কারন নির্ধারন প্রয়োজন । টীকার কোন উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা আছে কিনা সেটা নির্নয় করার জন্য ইম্যুনোলজিস্ট এর পরামর্শ নেয়া যেতে পারে । পরবর্তী টীকা নেবার সময় একই টীকা আবার নিলে একই উপসর্গ দেখা দিতে পারে কাজেই যে টীকার উপাদানে সংবেদনশীল উপাদান নেই সেই টীকা নেয়া যেতে পারে ।

Adenopathy / Lymphadenopathy : শ্ররীরের এক বা একাধিক লসিকা গ্রন্থি বা লিম্ফ নোড ফোলে যাবার মত লক্ষন দেখা দিতে পারে । লিম্ফ নোড এর সাইজ ১.৫ সেন্টিমিটার এর বেশী হওয়াকে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিৎ । কোন কোন ক্ষেত্রে লিম্ফ নোড থেকে তরল কিংবা পুঁজ জাতীয় উপাদান চামড়ার বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় ।

ব্যাথা নাশক ঔষধ প্রথমিক পর্যায়ে দেয়া হয় । ছোট লিম্ফ নোড ফোলা ১-৬ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে । বড় লিম্ফ নোড যেগুলো থেকে পুঁজ জাতীয় তরল নিঃসরন হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে Incision and drainage করতে হতে পারে ।

Allergic reaction : এক্ষেত্রে ত্বক ও মিউকাস মেম্ব্রেন বা ঝিল্লি প্রর্দার উপসর্গ হিসেবে চুলকানি , ত্বক লাল হয়ে যাওয়া ও লাল হওয়া অংশ ফোলে যাওয়া ও সর্দি পড়ার মত লক্ষন হতে পারে । অপর দিকে শ্বাস কষ্ট বা এজমার মত লক্ষন দেখা দিতে পারে । সাধারনত টীকা দেবার ৭২ ঘন্টার মধ্যে এসব লক্ষন দেখা দেয় ।

এক্ষেত্রে পরবরতী টীকা নেবার আগে ইম্যুনোলজিস্ট এর পরামর্শ নিতে হবে ।

Anaphylaxis : এটি এক ধরনের গুরুতর এলার্জিক রিয়েকশন । সাধারনত টীকা নেবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয় । অতী দ্রুত রক্ত চাপ কমে যাওয়া , অজ্ঞান হওয়া , শ্বাস কষ্ট হওয়া সহ ত্বকের লাল ভাব ব্যাপক আকারে দেখা দেয়া এই উপসর্গের লক্ষন । এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হতে পারে । ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন , শিরাপথে স্যালাইন , স্টেরয়েড কিংবা এন্টিহিস্টামিন ইঞ্জেকশন দেবার প্রয়োজন হতে পারে । তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় না । কোভিড ১৯ টীকা নেবার পর অন্তত ২০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করা উচিৎ । যদি কোন উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তাৎক্ষণিক টীকা কেন্দ্রের চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিৎ।

টীকার কোন উপাদানে সংবেদনশীলতা হয়েছে তা নির্ণয় করে নিতে হবে এবং পরবর্তীতে একই উপাদান সম্বলিত টীকা নেয়া থেকে বিরিত থাকতে হবে ।

seizure , Encephalitis and Meningitis : খিচুনী , মাথা ব্যথা , বমি হওয়া , অজ্ঞান হওয়া , ঘার শক্ত হয়ে যাওয়া জাতীয় কিছু লক্ষন দেখা দিতে পারে কিন্তু এরকম উপসর্গ খুবই বিরল ।

Dr. Sharif

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

Latest News

বাসায় অক্সিজেন – কোভিড ১৯ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর জন্য কখন উপযোগী ?

কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাবার সাথে সাথে হাসপাতালে বেড স্বল্পতার কারনে অনেক রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img