কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাবার সাথে সাথে হাসপাতালে বেড স্বল্পতার কারনে অনেক রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবার ফলে বাসায় অক্সিজেন দেবার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।
বাসায় রেখে অক্সিজেন দিলেও জেনে রাখতে হবে কোন কোন রোগীদের জন্য এটি উপযোগী এবং কোন কোন বিষয় পর্যবেক্ষনে রাখা অত্যান্ত জরুরী। এই পর্যবেক্ষণের মাধম্যে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয় যে কখন রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন এবং কখন বাসাতেই রেখে রেখে অক্সিজেন চালিয়া যাওয়া প্রয়োজন ।
বাসায় অক্সিজেন চিকিৎসা কাদের জন্য ?
যে সকল কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী মারাত্বক অবস্থায় নেই অর্থাৎ যারা স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ মস্তিস্কে রয়েছেন তাদের নিম্ন লিখিত পর্যবেক্ষন / শারীরিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বাসায় রেখে অক্সিজেন দেবার ব্যাবস্থা করা যেতে পারে
ঘরের স্বাভাবিক বাতাসে শ্বাস গ্রহন করে প্রথমিক অক্সিজেন সেচুরেশন ৯০ % এর বেশী হতে হবে । অর্থাৎ কোন অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহার না করে দেহের অক্সিজেন ৯০ % এর বেশী কিনা তা পালস অক্সিমিটারে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে । যদি দেহের অক্সিজেন ঘরের স্বাভাবিক বাতাসে ৯০ % এর নীচে থাকে তাহলে সেই সব রোগীরা ঘরে অক্সিজেন চিকিৎসার উপযোগী নন।
শ্বাস নেবার গতি প্রতি মিনিটে ২৮ এর কম হতে হবে।
রক্ত চাপ বা ব্লাড প্রেশার ১০০/৬০ mmHg এর বেশী হতে হবে ।
নাড়ীর গতি বা পালস প্রতি মিনিটে ১১০ এর কম হতে হবে ।
বয়স ৬০ বছরের নীচে হতে হবে ।
শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে থাকতে হবে।
বুকের এক্স-রে নরমাল থাকবে কিংবা সামান্য পরিবর্তন থাকবে । এক্স – রে তে বেশী পরিবর্তন থাকলে রগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
উপরোক্ত নির্ণায়ক পুরন করা রোগীদের যদি প্রতি মিনিটে ১-২ লিটার সর্বোচ্চ ৪ লিটার অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেবার পর তাদের দেহের অক্সিজেন সেচুরেশন যদি ৯৪ % বা তার বেশী থাকে , প্রতি মিনিটে শ্বাসের হার ২৮ এর কম থাকে এবং পালস বা নাড়ীর গতি প্রতি মিনিটে ১০০এর নীচে থাকে তাহলে তাদের বাসায় অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করার উপযোগী হিসবে ধরে নেয়া যায় ।
রোগীর ফলোআপ
রোগীকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে । শারীরিক ও রক্ত পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক যে ঔষধগুলো দিবেন সেগুলো নিয়মিত নিতে হবে ।
প্রতি ২ ঘন্টায় একবার পালস অক্সিমিটার দিয়ে দেহের অক্সিজেন এর মাত্রা দেখে নিতে হবে । তিনি আলাদা রুমে আইসোলেশনে থাকবেন । উনাকে সেবাদানকারী ব্যাক্তি মাস্ক , গ্লাভস ও দূরত্ব বজায় রেখে উনার দেখাশুনা করবেন ।
রোগী ব্রিদিং এক্সারসাইজ করবেন ।
বাসায় ১-২ লিটার / মিনিট ( সর্বোচ্চ ৪ লিটার / মিনিট) অক্সিজেন এ থাকা কালীন সময় যদি রোগী খুব অসুস্থ বোধ করেন কিংবা অক্সিজেন সেচুরেশন ৯০ % এর নীচে নেমে যায় তাহলে রোগী জরুরী বিভাগে দেখা করবেন ।
৪৮ ঘন্টা পর প্রথম এবং ৭২ ঘন্টা পর দ্বিতীয় বার সরাসরি উনার চিকিৎসককে দেখাবেন । চিকিৎসক তখন দেখেবেন অক্সিজেন ছাড়া ঘরের বাতাসে রোগীর অক্সিজেন সেচুরেশন কত । যদি তা ৯০ % হয় বা তার নীচে হয় তাহলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিবেন । আর যদি ৯০ % এর বেশী হয় এবং অন্যান্য মাপকাঠি ঠিক থাকে তাহলে রোগীকে আবার বাসায় অক্সিজেন দিতে বলবেন এবং ৫ম দিন ৩য় বারের মত সরাসরি দেখা করতে আসতে বলবেন । তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে উভয় ভিজিটেই উল্ল্যেখিত ১-৪ লিটার/ মিনিট অক্সিজেন দেবার পর রোগীর অক্সিজেন সেচুরাশন ৯৪% এর বেশী থাকতে হবে । যদি উল্ল্যেখিত অক্সিজেন দেয়ার পরও তা ৯৪ % এর কম থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করে নিতে হবে ।
৫ম দিন সরাসরি দেখে চিকিৎসা দেবার সময় চিকিৎসক সবগুলো মাপকাঠি দেখে নিবেন । অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া রুমের বাতাসে যদি অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৫ % বা তার বেশী থাকে তাহলে রোগীকে অক্সিজেন ছাড়া বাসায় যাবার ছাড়পত্র দিবেন এবং আইসোলেশন শেষ করতে বলবেন ।